Saturday, 06 December 2025
Details

মেডিটেশন: মানসিক চাপ কমানো ও মনকে শান্ত রাখার সহজতম উপায়

মেডিটেশন বা ধ্যান আজকের দ্রুতগতির জীবনে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের কাজের চাপ, টেনশন, সম্পর্কজনিত সমস্যা, স্ট্রেস এবং অনিদ্রার মতো সমস্যা যে কারও জীবনকে অস্থির করে দিতে পারে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেডিটেশন অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের নামকরা মনোবিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন—ধ্যান শুধু একটি মানসিক ব্যায়াম নয়, এটি শরীর ও মনের গভীরে কাজ করা একটি প্রাকৃতিক থেরাপি।

প্রথমত, মেডিটেশন স্ট্রেস কমাতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। স্ট্রেস হলে শরীরে ‘কর্টিসল’ নামক হরমোন বেড়ে যায়, যা উদ্বেগ, রাগ, অনিদ্রা এবং মনযোগের ঘাটতি সৃষ্টি করে। নিয়মিত ধ্যান করলে কর্টিসলের মাত্রা কমে যায়। ফলে মন শান্ত হয়, মাথা হালকা লাগে এবং কাজ করার শক্তি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ১০–১৫ মিনিট ধ্যান করলে স্ট্রেস প্রায় ৪০% পর্যন্ত কমে।

মেডিটেশন মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। যখন আমরা পড়াশোনা করি, চাকরি করি বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাই, তখন মনোযোগ অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু মনের ভেতরে প্রচুর চিন্তা থাকলে মনোযোগ ভেঙে যায়। ধ্যান মনকে বর্তমানের দিকে ফোকাস করতে শেখায়। ‘মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন’ বিশেষভাবে মনকে চঞ্চলতা থেকে মুক্ত করে এবং মনোযোগ বহুগুণ বাড়ায়।

এর পাশাপাশি মেডিটেশন উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। অনেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ বা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে উদ্বেগে ভোগেন। এমন অবস্থায় ধ্যান মনকে ধীরে ধীরে প্রশান্তির দিকে নিয়ে যায়। ধ্যানের সময় গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস মস্তিষ্কে অক্সিজেন বাড়ায়, যা উদ্বেগ কমিয়ে মনকে স্থির রাখে।

ধ্যান ঘুমের মানও উন্নত করে। অনিদ্রা আজকের তরুণদের সাধারণ সমস্যা। মোবাইল, স্ট্রেস, অস্বাভাবিক জীবনযাপন—সব মিলিয়ে রাতে ঘুম আসে না। মেডিটেশন মস্তিষ্ককে শিথিল করে এবং শরীরে ঘুমের হরমোন ‘মেলাটোনিন’ বৃদ্ধি করে। ফলে ঘুম দ্রুত আসে এবং ঘুম গভীর হয়।

মেডিটেশন আবেগ নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রতিদিন নানান রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হই—রাগ, কষ্ট, দুঃখ, ভয়, উৎকণ্ঠা। এসব আবেগ যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে সম্পর্ক, কাজ ও ব্যক্তিগত শান্তি নষ্ট হয়। ধ্যান আবেগ পর্যবেক্ষণ করা এবং তা নিয়ন্ত্রণ শেখায়। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে মেডিটেশন করা ব্যক্তিরা আবেগগতভাবে বেশি স্থিতিশীল হয়।

মেডিটেশন শরীরের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হৃৎস্পন্দন কমায় এবং ব্যথা কম অনুভব করতে সাহায্য করে। দীর্ঘমেয়াদে ধ্যান মনে ও শরীরে এমন পরিবর্তন আনে যা শরীরকে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এমনকি মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন কমাতেও মেডিটেশন সাহায্য করে।

মেডিটেশন শুরু করতে খুব বেশি কিছু লাগে না—শুধু একটি শান্ত পরিবেশ এবং নিজের মন।
ধ্যান করার সহজ ধাপ:
১. একটি শান্ত জায়গায় বসুন
২. চোখ বন্ধ করুন
৩. ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন
৪. শুধু নিজের শ্বাসের শব্দ শুনুন
৫. মন অন্যদিকে গেলে আবার শ্বাসের দিকে ফেরান

প্রথমে ৫ মিনিট দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।

ধর্ম, বয়স বা বিশ্বাস যাই হোক, মেডিটেশন সবার জন্য উপকারী। এটি মানসিক শান্তি দেয়, মনোযোগ বাড়ায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা উন্নত করে এবং একটি সুখী জীবন গঠনে বড় ভূমিকা রাখে। তাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন কয়েক মিনিট ধ্যান করা উচিত।

উপসংহারে, মেডিটেশনকে জীবনের অংশ বানানো মানে নিজেকে মানসিকভাবে সমৃদ্ধ করা। এটি এমন একটি অভ্যাস যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দিতে সক্ষম।